মোজাফফার হোসাইন, আটুলিয়া:
শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউনিয়নে সরকারি শিক্ষকদের রমরমা কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের পাহাড়। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলো অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করছে হাজার হাজার টাকা। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নীতিমালা লঙ্ঘন করে শিক্ষকরা নিজেদের নাম ও মোবাইল নম্বরসহ সাইনবোর্ড লাগিয়ে চালাচ্ছেন বাণিজ্য।
সরেজমিনে জানা যায়, নওয়াবেঁকী সড়কের পাশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৯টি কোচিং সেন্টার সক্রিয়। এখানকার শিক্ষকরা দিনে-রাতে একাধিক ব্যাচে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে ক্লাস করাচ্ছেন। অথচ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোচিং নীতিমালা ২০১২ অনুযায়ী, সরকারি শিক্ষকরা এ ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাধ্য হয়ে কোচিংয়ের টাকা দিতে হচ্ছে। শরিফুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, "অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও টাকার ব্যবস্থা করতেই হচ্ছে, কারণ না দিলে সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হবে।"
স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোচিং বাণিজ্যের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনৈতিক কাজে জড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। এক সেচ্ছাসেবী বলেন, "কোচিং সেন্টারের আড়ালে অসামাজিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। সম্প্রতি একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, যার পেছনে কোচিং কেন্দ্রে তৈরি সম্পর্কের জটিলতা ছিল।"
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী এসব কোচিং সেন্টার চালানোর জন্য শিক্ষকদের সহায়তা করছে এবং তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয়।
অভিযোগের বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূর মোহাম্মদ তেজারত বলেন, "সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা নীতিমালা অমান্য করে কোচিং করালে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনী খাতুন জানান, "কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।"
অভিভাবক ও স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কোচিং বাণিজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে, নীতিমালা উপেক্ষা করে কিছু শিক্ষক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে।