গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও দলটির কোনো অনুশোচনার লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে দেশকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করতে চায় তারা। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
গণআন্দোলনের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন এবং ভারতে পালিয়ে যান। ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও আত্মগোপনে রয়েছেন। যদিও কিছু নেতা গ্রেফতার হয়েছেন, তৃণমূল কর্মীরা এখনো বিভিন্নভাবে সক্রিয়। সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা বিদেশে থেকেও দেশে থাকা নির্বাচিত নেতা-কর্মীদের সাথে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন এবং দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তার নির্দেশে সাইবার যোদ্ধারা বিভিন্ন ইস্যুতে অনলাইন ও অফলাইনে সক্রিয়তা দেখাচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি পূজামণ্ডপে গানের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক বিতর্ক ছড়ানো হয়, যা আওয়ামী লীগের সাইবার যোদ্ধাদের প্রচারণার ফসল। ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারনার মাধ্যমে এই ইস্যুকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয়। এর ফলে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। দলের সাইবার যোদ্ধারা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে।
এছাড়া, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দলটির সাইবার যোদ্ধারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার নিজেই দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল, এখন দলটি এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উসকে দিয়ে জনগণকে সরকারের বিপক্ষে দাঁড় করাতে চায়।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রাম পুলিশ, আনসার, পোশাক শ্রমিক, এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকায় সংঘাতের পেছনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চক্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও দলটি ঢালাওভাবে সরকারের বিরুদ্ধে গণগ্রেফতারের অভিযোগ তুলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, "দেশে বিভিন্ন ইস্যুকে ফুলিয়ে সামনে আনা হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।" রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, "আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা বিশ্বাস করে যে তারা শিগগিরই আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারবে, তাই তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।"