
বাংলার বার্তা ডেস্কঃ
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকা চরম বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানে খানাখন্দ আর ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তির পাশাপাশি প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বর্ষণে গ্রামীণ অধিকাংশ কার্পেটিং সড়কও চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বরিশাল সদর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। কোথাও বিটুমিন উঠে গিয়ে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে, যা এই ব্যস্ততম মহাসড়কটিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের জিরো পয়েন্টেও মহাসড়কের বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ রুটে চলাচলকারী পরিবহন চালক রিপন তালুকদার জানান, টরকী বাসস্ট্যান্ডে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফুট জায়গাজুড়ে বিটুমিন উঠে যাওয়ায় নিম্নমানের ইট বিছিয়ে সাময়িকভাবে মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাও উঠে গেছে, ফলে ওইসব জায়গা এখন চরম বিপজ্জনক।
এছাড়াও রাস্তার বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু টিউমারের মতো ঢেউ উঠেছে, যা যানবাহনের গতিতে প্রভাব ফেলছে এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গাড়ির চাকা গর্তে পড়লে হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, মদিনা স্ট্যান্ড, দক্ষিণ বিজয়পুর, আশোকাঠী, কাসেমাবাদ, বেজহার, মাহিলাড়া, বাইচখোলা, বাটাজোর, কবি বাড়ি, বামরাইল, সানুহার ও জয়শ্রী বাসস্ট্যান্ড এলাকার মহাসড়কেও অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল চরম বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এই সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে, ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। জরুরি রোগী পরিবহন থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত—সবকিছুতেই বিঘ্ন ঘটছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেশের সর্বদক্ষিণের পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত যাতায়াতের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কটি দীর্ঘ দিন ধরে ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি করে আসছেন দক্ষিণাঞ্চলবাসী। সচেতন এলাকাবাসীর দাবি, মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সরু মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত না করেই তড়িঘড়ি করে পদ্মা সেতু চালু করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ, পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত সরু মহাসড়কে পূর্বের তুলনায় চার গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করছে।
এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী তারেক মাহমুদ আলী বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানের বেপরোয়া গতির সঙ্গে যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ায় ও সরু মহাসড়কে দূরপাল্লার পরিবহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং বেপরোয়া গতিতে ওভারটেকিংয়ের কারণে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিনের বর্ষায় সরু মহাসড়কের অধিকাংশ এলাকা এখন খানাখন্দ ও ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের কারণে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই মহাসড়কটি এখন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এক নিত্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে মহাসড়কের এসব গর্তে নামেমাত্র ইটের টুকরো ফেলে মেরামতের চেষ্টা করা হলেও কয়েক দিনের ব্যবধানে ওইসব ইটের টুকরো উঠে গিয়ে আবার পুরনো রূপে ফিরে যায় মহাসড়কের দুর্ভোগ। এই অস্থায়ী মেরামত কাজ কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দিচ্ছে না।
এ রুটে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী দূরপাল্লার পরিবহনের চালক, স্টাফ ও সচেতন বরিশালবাসী মনে করছেন, মহাসড়কটি দীর্ঘদিনের পুরনো। বর্তমানে প্রতিদিন চলাচলকারী কয়েক হাজার যানবাহনের ধারণক্ষমতা এই মহাসড়কের নেই। যে কারণেই সংস্কার কাজ স্থায়িত্ব পাচ্ছে না।
তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সরু মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মহাসড়কের সক্ষমতা হারানোর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি কমে আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সংস্কার কাজ করা হবে। তবে, স্থানীয়দের দাবি, শুধুমাত্র সংস্কার কাজ যথেষ্ট নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে মহাসড়কটিকে ৬ লেনে উন্নীত করা না হলে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বিপর্যস্ত হবে।
Leave a Reply