
স্বপ্ন ছিল সংসারে সচ্ছলতা আনার, সেই স্বপ্ন নিয়েই ৬ শতক ভিটেমাটি বিক্রি করে এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমান রানা মিয়া (৩৫)। কিন্তু বাস্তবতা ছিল নির্মম প্রতারণা। দেড় বছরের মাথায় তিনি ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার মরদেহ পৌঁছায়। পরে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ গ্রামের বাড়ি পলুপাড়ায় নেওয়া হলে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া গ্রামের মৃত জামেদ আলীর ছেলে রানা মিয়া।
স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর আগে সৌদি আরব যান রানা মিয়া। তাকে জানানো হয়, তাকে একটি ভালো কোম্পানিতে চাকরি দেয়া হবে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি বুঝতে পারেন, তাকে পাঠানো হয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসায়। কোনো বৈধ চাকরি না থাকায় বাধ্য হয়ে দালালদের সিন্ডিকেটের অধীনে কাজ শুরু করেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম করলেও তার উপার্জনের পুরো টাকাই চলে যেতো ওই দালাল চক্রের পকেটে।
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি বারবার যোগাযোগ করেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের দালাল সেলিম মিয়ার সঙ্গে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। এক পর্যায়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে বাড়ি থেকে আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার করে ৬০ হাজার টাকা এনে শুরু করেন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ফুড ডেলিভারি কাজ।
চলতি মাসের ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রাস্তায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রানা মিয়া। অনেক চেষ্টার পর তার মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছে ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে। সেখান থেকে সন্ধ্যায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি পলুপাড়ায়। সেখানে পৌঁছানোর পর পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গোবিন্দগঞ্জে সক্রিয় একটি দালাল চক্র নিরীহ মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছে। রানা মিয়ার মৃত্যু সেই প্রতারণার নির্মম পরিণতি।
নিহতের স্বজনরা জানান, রানা মিয়া সংসারের উন্নতির আশায় প্রায় ছয় শতক বসতভিটা ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের গোবিন্দগঞ্জ শাখা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরপর স্থানীয় দালাল শিবপুর ইউনিয়নের সেলিম মিয়ার মাধ্যমে দেড় বছর আগে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
রানা মিয়ার স্ত্রী আরেফা বেগম, ১১ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আরাফাত ও পাঁচ বছরের শিশু ছেলে রয়েছে। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে সন্তানদের নিয়ে বড় ভাইয়ের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন তিনি।
Leave a Reply