বাংলার বার্তা ডেস্কঃ
ঈদের মাত্র দু’দিন আগে কারাগারে পাঠানো হয় দরিদ্র ভ্যানচালক শফিকুল তালুকদারকে। তার অপরাধ, তিনি নিজের অজান্তে কিছু সরকারি পাঠ্যবই একটি ভাঙ্গারির গোডাউনে পৌছে দেন। অথচ যিনি বইগুলো কিনেছেন সেই ভাঙ্গারি গোডাউনের মালিক মজিবর বেপারীর কিছুই হয়নি। কারণ তিনি ঝালকাঠির বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো: কাওছার হোসেনের ভাই। অভিযোগ উঠছে, পুরো ঘটনা থেকে এডিসির ভাইকে আড়াল করতেই নিরীহ ভ্যানচালক শফিককে কৌশলে জেলে পাঠিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি। ঘটনার শুরু ৫ জুন। বেলা ২টার দিকে নিজ ঘরে খাবার খেতে বসেছিলেন শফিকুল। পিঙ্গলাকাঠী এলাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সুজন বেপারী শফিকুলকে ফোন দিয়ে কাসেমাবাদ হেলিপ্যাডসংলগ্ন মেসার্স মদিনা স্টোর নামের মজিবর বেপারীর ভাঙ্গারির গেডাউনে কিছু ভাঙ্গারি মালামাল পৌঁছে দিতে বলেন। প্রথম দফায় ভাঙ্গারি টিন ও সাইকেল ভাঙ্গা পৌঁছে দেয়ার পর, দ্বিতীয় দফায় আনাম বাবুর্চির বাড়ি থেকে সরকারি পাঠ্যবইগুলো নিয়ে মজিবর বেপারীর ভাঙ্গারি গেডাউনে মজুদ করছিলেন শফিকুল ও কয়েকজন শ্রমিক। স্থানীয়রা মজিবরের ভাঙ্গারি কারখানায় বিপুল পরিমাণ নতুন বই নামানো দেখে সাংবাদিকদের খবর দেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও রিফাত আরা মৌরি ও ওসি (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে ভ্যানে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন বইসহ গোডাউন ভর্তি বিভিন্ন বছরের সরকারি পাঠ্যবইয়ের মজুত দেখতে পান। সবার সামনেই বই গণনার নির্দেশ দেন ইউএনও। এ সময় ইউএনওর কাছে নিজেকে ঝালকাঠির এডিসি কাওছার হোসেনের ভাই হিসেবে পরিচয় দেন গোডাউনের মালিক মজিবর বেপারী। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউএনওর সরকারি নম্বরে ফোন করেন এডিসি নিজেই। এরপর ভ্যানচালক শফিকুলকে প্রাথমিকভাবে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন ইউএনও। পরদিন ৬ জুন সকালে পাল্টে যায় ঘটনার মোড়। ভ্যানচালক শফিকুল, বই বিক্রেতা সুজন ও কলাবড়িয়া দারুল আরকাম এবতেদায়ি মাদরাসার দফতরি সাগর হোসেনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়। কিন্তু আসামি করা হয়নি মূল অভিযুক্ত মজিবর বেপারীকে। ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মজিবর বেপারী বলেন, ‘ইউএনও আসার পর আমি আমার ভাই কাওছারকে (এডিসি) ফোন দিই। পরে এডিসি নিজে ইউএনওর সাথে কথা বলেন। কেউ রাস্তা দিয়ে বই নিয়ে গেলে তার দায় আমার হবে কেন?’ গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গোডাউনের ভেতর অনেক সরকারি পাঠ্যবই ছিল। উপস্থিত আমি ও অন্যরা সেসব দেখেছেন। পরে আমি ইউএনওর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেছি।’ ইউএনও রিফাত আরা মৌরি বলেন, ‘গোডাউনে পুরাতন কিছু বই পাওয়া গেলেও এ বছরের নতুন বই পাওয়া যায়নি। তবে ভ্যান থেকে এ বছরের কিছু নতুন বই জব্দ করা হয়েছে। ঝালকাঠি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো: কাওছার হোসেন বলেন, তিনি (মজিবর) আমার প্রতিবেশী বড় ভাই। তাই আমি বিষয়টি জানার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। তদবিরের জন্য ফোন দিইনি।