
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, ঝরছে তাজা প্রাণ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অসংখ্য মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্ঘটনার এই লাগামহীন বৃদ্ধি সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বিন্দুমাত্র কমছে না, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু না হওয়াই এই দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ।
মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল, ত্রুটিপূর্ণ ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ বিচরণ, চালকদের অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন অমান্যের মতো বিষয়গুলো দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত গতির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গতিতে গাড়ি চালানো হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ওভারটেকিংয়ের সময়ও অনেক চালক নিয়ম মানছেন না, যার ফলস্বরূপ মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষ মরছে। কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসছে না। প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে তাদের কাছে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই।”
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, দুর্ঘটনার পর অনেক সময় মামলা প্রক্রিয়াও দীর্ঘসূত্রিতার জালে আটকে যায়। এতে দোষীরা পার পেয়ে যায় এবং ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েও অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা চালকদের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব তৈরি করছে।
এদিকে, এই রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধেও দুর্ঘটনার পেছনে পরোক্ষ মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, তারা নিজেদের সদস্যদের যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন, যা আইনের সঠিক প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় দিনের পর দিন ঘুমহীনভাবে গাড়ি চালানো এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর মতো অভিযোগও ওঠে চালকদের বিরুদ্ধে, যার তদারকিতেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতি দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ এখনও এর কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটিই সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। সরু রাস্তা এবং দুই লেনের সড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ প্রায়শই দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে। দ্রুতগতির যানবাহনগুলো ওভারটেক করতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। চার লেন হলে একই দিকে দুটি লেন থাকায় বিপরীতমুখী যানবাহন চলাচলের সুযোগ কমবে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে মনে করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা।
সড়ক প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, “একটি আধুনিক ও নিরাপদ মহাসড়কের জন্য চার লেন অপরিহার্য। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের যে চাপ, তাতে এটি অনেক আগেই চার লেনের হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে এই দীর্ঘসূত্রতা মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।”
দুর্ঘটনার লাগাম টানতে হলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মৃত্যুর এই মিছিল কবে থামবে, তা নিয়েই এখন জনমনে প্রশ্ন। কর্তৃপক্ষ কি এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, নাকি আরও অসংখ্য প্রাণ ঝরলে তাদের টনক নড়বে—এটাই এখন দেখার বিষয়।
আর কিছু যোগ করার আছে কি?
Leave a Reply